চলতি বছরের শুরুর দিকে আলাদা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা করা শাওমির ব্র্যান্ড পোকো তাদের নতুন স্মার্টফোন প্রকাশ করেছে। শাওমি পোকোফোন এফ১ এর উত্তরসূরী হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে পোকো এফ২ প্রো স্মার্টফোন। পোকো এফ১ এর ব্যাপক সাফল্যের পর পোকো এফ২ প্রো এসেছে ফ্ল্যাগশিপ কিলার হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে।
পোকো এফ২ প্রো ফোনটিতে থাকছে ৬.৬৭ ইঞ্চি ফুল এইচডি+ অ্যামোলেড ডিসপ্লে, স্ক্রিনের মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, ৫জি সাপোর্ট, পিছনের দিকে চারটি ক্যামেরা এবং পপ-আপ সেলফি ক্যামেরা। সাথে থাকছে ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক।
![]() |
Picture Credit - https://www.gsmarena.com/xiaomi_poco_f2_pro-pictures-10220.php |
পোকো এফ২ প্রো ফোনটি চলবে স্নাপড্রাগন ৮৬৫ প্রসেসরে, যা নিঃসন্দেহে এর ফ্লাগশিপ কিলার হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সাথে থাকছে অ্যাড্রিনো ৬৫০ জিপিইউ। নির্মাতা কোম্পানির দাবি অনুযায়ী ফোনটিতে রয়েছে সবচেয়ে বড় ভ্যাপর চেম্বার যার ফলে এটি দারুণ লিকুইডকুল প্রযুক্তি সাপোর্ট করবে যেটি একে হাই-এন্ড গেম খেলার সময় ও ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।
ডিভাইসটিতে ব্যাক ক্যামেরা প্যানেলে পাচ্ছেন ৬৪ মেগাপিক্সেল মূল সেন্সর, সাথে আরও তিনটি সেন্সর। অর্থাৎ এর মূল ক্যামেরায় ৪টি লেন্স আছে (৬৪+১৩+২+৫ মেগাপিক্সেল)।
আর পপ-আপ হিসেবে দেওয়া সেলফি ক্যামেরায় ২০ মেগাপিক্সেল সেন্সর পাবেন।
৪৭০০ এমএএইচ ব্যাটারি যুক্ত পোকো এফ২ প্রো ফোনে ৩০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে।
ফোনটিতে এইচডিআর১০+ সাপোর্ট, ৫০০ নিটস ডিসপ্লে ব্রাইটনেস, গরিলা গ্লাস ৫ প্রভৃতি ফিচারও রয়েছে।
পোকো এফ২ প্রো ফোনটিকে মূলত রেডমি কে৩০ প্রো এর ইন্টারন্যাশনাল ভেরিয়েশন বলা চলে।
ডিভাইসটির দুটি ভেরিয়েন্ট থাকছে। একটিতে ৬ জিবি র্যাম এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ, আর অন্যটিতে ৮ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজ।
অ্যান্ড্রয়েড ১০ চালিত এই ফোনটি ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। এর ৬/১২৮জিবি ভেরিয়েশন এর দাম ৫৪০ ডলারের মত, আর ৮/২৫৬ জিবি ভ্যারিয়েশনের দাম ৬৫০ ডলার পড়বে। বাংলাদেশী টাকায় এর দাম কত হবে সেটা বাংলাদেশের প্রাইসিং ঘোষণা করার পরে জানা যাবে।
পোকো এফ-২ প্রো:
স্পেক্স এবং ফিচারস
ডিজাইন
পোকো এফ-১ স্মার্টফোনটিতে যেখানে ব্যাবহার করা হয়েছে পলিকার্বনেট ব্যাক সেখানে পোকো এফ-২ তে শাওমি লাগিয়েছে প্রিমিয়াম গ্লাস-স্যান্ডউইচ ব্যাক এবং সাইড ফ্রেমটি বানিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা।
সেই পোকো এফ-১ এর দুর্বিষহ নচ এখন আর নেই । তার পরিবর্তে তারা একটা মডার্ন লুক দিয়েছে যেখানে তারা ব্যাবহার করেছে একটা ফুলস্ক্রিন বেজেল লেস ডিসপ্লে সামনের অংশে। রেডমি কে-২০ প্রো এর মত সামনের ফ্রন্ট ক্যামেরা এখন পপ আপ ফাংশনালিটি এর মধ্যে আনা হয়েছে।
পেছনের ব্যাক প্যানেলটিতে ক্যামেরা প্লেসমেন্ট করা হয়েছে রিংয়ের এর মত গোল করে। ব্যাক প্যানেলটিতে তারা গ্ৰেডিয়েন্ট ডিজাইন ব্যাবহার করেছে সেটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
ফ্রন্ট এবং ব্যাক প্যানেল দুটোই কর্নিং গোরিলা গ্লাস ৫ দ্বারা সুরক্ষিত। সামনের ডিসপ্লে তে একটা অন স্ক্রিন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরও লাগিয়ে দেওয়া আছে।
আগেই বলা হয়েছে পোকো এফ-২ প্রো এর ডিসপ্লেতে এখন আর সেই বড়ো নচ ব্যাবহার করা হয়নি। বরং এবার শাওমি ব্যাবহার করেছে একটা বেজেল লেস ডিসপ্লে যেখানে সেটায় রয়েছে পপ আপ স্টাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
এর অর্থ একটাই যে পোকো এফ-১ এর মধ্যে যে আই আর ভিত্তিক ফেস আনলক ছিল সেটা এখন আর পাওয়া যাবে না। তবে অনেকেই বেজেল লেস ডিসপ্লে প্রেফার করেন ওইরকম ফেস আনলক এর বদলে।
ডিভাইসটি তে ব্যাবহার করা হয়েছে ৬.৬৭-ইঞ্চি এর ফুল-এইচডি প্যানেল যার রেজোলিউশন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩৪০ × ১০৮০পি এবং এর অ্যাস্পেকট রেশিও হচ্ছে ২০:৯। এতে আরো ব্যাবহার করা হয়েছে ১৮০ হার্জ এর টাচ স্যাম্পলিং রেট এবং ডিসপ্লেটি এইচডিআর ১০+ ফিচার সমর্থিত। ফোনটির ব্রাইটনেস সর্বোচ্চ ১২০০ নিটস পর্যন্ত যেতে পারে
দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাওমি এখানে কোনো প্রকার ১২০ হার্জ এর স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট এর সাপোর্ট দেয় নি। কিন্তু তারা কিন্তু পোকো এক্স-২ স্মার্টফোনটিতে ব্যাবহার করেছিল ১৮০ হার্জ এর ডিসপ্লে। ২০২০ সালে এসে এরকম একটা ফোনে ১২০ হার্জ ডিসপ্লে সাপোর্ট না দেওয়া খুবই দুঃখজনক।
ইন্টারনাল স্পেকস
পোকো এফ-২ একটি ফ্ল্যাগশিপ ফোন তাই এতে নিতান্তই ব্যাবহার করা হয়েছে কোয়ালকম এর স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ প্রসেসর। পোকো এফ-২ ফোনটিতে ৫জি সাপোর্ট থাকছে কারণ এতে কোয়ালকম এর এক্স-৫৫ লাগানো আছে।
ফোনটি তে থাকছে এলপিডিডিআর-৫ এর ৮জিবি মেমোরি এবং ২৫৬জিবি পর্যন্ত ইউএফএস ৩.১ প্রযুক্তির স্টোরেজ স্পেস। ফোনটি ৭৭৭এমবি/সেকেন্ড পর্যন্ত রিড এবং রাইট স্পিড সাপোর্ট করে।
ফোনটি লঞ্চ করার সময় পোকো এফ-২ প্রো এর বেঞ্চমার্ক নিয়েও কথা বলে শাওমি। তারা দাবি করছে ফোনটি এন্টুটু বেঞ্চমার্কে ৫৮৯,৯৮৩ এর মত স্কোর করে। তারা বলছে পোকো এফ-২ প্রো এর এন্টুটু বেঞ্চমার্ক স্কোর ওয়ানপ্লাস ৮ প্রো এবং গ্যালাক্সি এস ২০ প্লাস (এক্সিনস) এর অপেক্ষা বেশি।
পোকো ফোনটিতে জিএফএক্সবেঞ্চ ম্যানহ্যাটান ৪.০ রান করে যেখানে এটি ৬০ এফপিএস এ ওয়ানপ্লাস ৮ প্রো এর সমতুল্য ছিল কিন্তু গ্যালাক্সি এস ২০ প্লাস এর উপরে অবস্থান করছিল।
গেমারদের জন্য ফোনটিতে বিশেষ ভাবে রয়েছে লিকুইড কুলিং টেকনোলজি ২.০ এবং ফোনটির ভেতরে আছে ভ্যাপর চেম্বার এবং গ্রাফিন শিট যেটা গেম খেলার সময় ফোনটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
পপ আপ সেলফি ক্যামেরা
ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছি পোকো এফ-২ প্রো স্মার্টফোনটিতে একটি পপ আপ মডিউল সম্পন্ন সেলফি ক্যামেরা আছে। ফ্রন্ট ক্যামেরা এর সেন্সর টি ২০ মেগা পিক্সেলের। ফ্রন্ট ক্যামেরাটি ১২০ এফপিএস পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড করতে পারবে এবং ভ্লগ মোড নামক একটি ফিচার সাপোর্ট করে।
পপ আপ মডিউলটি আরও একটা ফিচার নিয়ে আসে আর সেটা হচ্ছে আর্জিবি নোটিফিকেশন লাইট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নোটিফিকেশন লাইট এর কালার অ্যাপ এবং ফাংশন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সেট করা যাবে।
ক্যামেরা
পোকো এফ-২ প্রোতে থাকছে কুয়াড ক্যামেরা। কুয়াড ক্যামেরাটি রয়েছে পিছনের রিং আকৃতির ক্যামেরা কাট আউট এর মধ্যে। প্রাইমারি ক্যামেরা টি সনি আইএমএক্স ৪৮৬ এর ৬৪ মেগাপিক্সেল এর একটি সেন্সর। এছাড়াও রয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেল এর আল্ট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স যার ফিল্ড অফ ভিউ ১২৩ ডিগ্রি।
এরপর আরও রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেল এর ম্যাক্রো ক্যামেরা যেটা অন্যান্য ম্যাক্রো এর তুলনায় আরও বেশি সাবজেক্টের কাছে যেতে পারে। এবং একটি ২ মেগাপিক্সেল এর ডেপথ সেন্সর।
পোকো এফ-২ প্রো এর ক্যামেরা পোকো এক্স-২ এর মত কিন্তু কিছু পরিবর্তন আছে যেমন এর লেন্স বড়ো, পিক্সেল সাইজও বড়ো ইত্যাদি। ফোনটির ক্যামেরা দিয়ে 8K ভিডিও রেকর্ডিং, পোট্রেট ভিডিও এবং স্লো মোশান সেলফি সহ আরো অনেক ফিচার রয়েছে।
সফটওয়্যার
পোকো এফ-২ প্রো চলছে MIUI 11 এর উপরে যেটা Android 10 আউট অফ দা বক্স সাপোর্ট করে। এছাড়া ফোনটিতে রয়েছে ডার্ক মোড, অলওয়েজ অন ডিসপ্লে এবং অন্যান্য MIUI 11 এর ফিচারস। কিন্তু এতে আলাদা করে পোকো লঞ্চার আছে যেটা অ্যাপ ড্রয়ার সাপোর্ট করে।
কানেক্টিভিটি
আশ্চর্যজনকভাবে ফোনটিতে থাকছে 3.5mm এর হেডফোন জ্যাক। যেটা দিয়ে আপনি গান শুনতে পারবেন কিংবা ভয়েস রেকর্ডিং করতে পারবেন। ফোনটি থাকছে WiFi 6, NFC, Bluetooth 5.1 এছাড়াও আরো অনেক কিছু।
এমনকি ফোনটি IR Blaster ও আছে টিভি এবং অ্যাপ্লিয়েন্সেস কন্ট্রোল করার জন্য।
ব্যাটারি এবং চার্জিং
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Do not post any link in the comment box